দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী ট্রান্সকম গ্রুপ নিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যমগুলোতে ক্রমাগতভাবে মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মানহানিকর ও অবাস্তব সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় ৩ ফেব্রুয়ারি কালের কণ্ঠে ‘হাসিনাকে ১০০ কোটি টাকা ঘুষ সিমিনের’ এই শিরোনামে একটি মিথ্যা, বানোয়াট, মানহানিকর সংবাদ প্রকাশ করা হয়। একই বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন ও বাংলা নিউজ টোয়েন্টি ফোর ডটকমেও পৃথক শিরোনামে মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রচার করা হয়। কালের কণ্ঠ ও বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার অনলাইন সংস্করণেও মিথ্যা ওই খবর প্রকাশিত হয়। এ বিষয়ে ট্রান্সকম গ্রুপের বক্তব্য হলো, ফ্যাসিবাদী সরকারের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ট্রান্সকম গ্রুপের গ্রুপ সিইও সিমিন রহমান ২০২৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের বাইরে অবস্থান করেন, যা তাঁর পাসপোর্ট থেকেই জানা যায়। বিদেশে অবস্থান করে একই সঙ্গে গণভবনে কীভাবে অবস্থান করা যায়, তা কোনোভাবেই বোধগম্য নয়। এটি সম্পূর্ণ অবাস্তব ও মিথ্যা। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, সিমিন রহমান তাঁর জীবদ্দশায় কোনো দিন ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। সংবাদে বলা হয়েছে, সিমিন রহমান তাঁর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে চেক প্রদান করেন।
—প্রকৃতপক্ষে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের কোনো শাখায় সিমিন রহমানের কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যমগুলোতে কীভাবে, কোন উদ্দেশ্যে দেশের স্বনামধন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তথা দুদক ও সিআইডির বরাত দিয়ে এরূপ নির্জলা মিথ্যাচার করতে পারে?
সংবাদে আরও বলা হয়েছে, সিমিন রহমানের ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানের লাশ কবর থেকে উত্তোলন ও ময়নাতদন্ত করা হয়, যা পরবর্তীতে ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। —এটি আরও একটি মিথ্যাচার। প্রকৃত তথ্য এই যে, আরশাদ ওয়ালিউর রহমানের লাশ কখনই কবর থেকে উত্তোলন বা ময়নাতদন্ত করা হয়নি। অত্যন্ত হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার লক্ষ্যে এরকম মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। সংবাদে উল্লেখ করা হয়, ঘুষ লেনদেনের পর তৎকালীন সরকারের নির্দেশে হত্যা ও শেয়ার-সংক্রান্ত মামলা ধামাচাপা দেওয়া হয়।
—এটিও অন্যান্য তথ্যের মতোই সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। প্রকৃতপক্ষে, হত্যা মামলাটি তদন্ত শেষে অভিযোগের কোনোরূপ সত্যতা না থাকায় গত বছরের ৩ অক্টোবর (ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের পর) তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। গত বছরের ২৪ অক্টোবর বিজ্ঞ আদালত তা গ্রহণ করেন। বিজ্ঞ আদালত এই মামলার সব আসামিকে অব্যাহতি দেন। অন্যদিকে শেয়ার-সংক্রান্ত মামলা বর্তমানে চলমান।
সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার গ্রুপ নতুন সরকারের সঙ্গেও আঁতাত বেধেঁছে। নতুন সরকারে তাদের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টার জায়গা হয়েছে।’ —এই মন্তব্য শুধু মিথ্যাচারই মানহানিকর নয়, বরং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার একটি সুচারু অপপ্রয়াস। কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট তথ্য ব্যতিরেকে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য এ ধরনের মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করা দেশবিরোধী চক্রান্তের শামিল।
ট্রান্সকম লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও এমডি ছিলেন লতিফুর রহমান। লতিফুর রহমান মৃত্যুর আগেই তাঁর অবর্তমানে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা এবং তাঁর নিজস্ব শেয়ারের বণ্টন বিষয়ে ২০২০ সালের ১২ জুন একটি ‘ডিড অব সেটেলমেন্ট’ সম্পাদন করেন। লতিফুর রহমান ছাড়াও তাঁর পরিবারের সব সদস্য, অর্থাৎ তাঁর স্ত্রী শাহনাজ রহমান, বড় মেয়ে সিমিন রহমান, ছোট মেয়ে শাযরেহ্ হক ও ছেলে আরশাদ ওয়ালিউর রহমান এই ‘ডিড অব সেটেলমেন্টের’ সব শর্ত মেনে সম্মতিসূচক স্বাক্ষর প্রদান করেন। এমনকি এই ডিড অব সেটেলমেন্টে সাক্ষী হিসেবে তাঁর বড় মেয়ের ছেলে যারেফ আয়াত হোসেন, ছোট মেয়ে শাযরেহ্ হকের দুই ছেলে যোয়েব আশরার হক ও মিখাইল ইমান হক এবং ট্রান্সকম গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় দুজন কর্মকর্তা সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর প্রদান করেন।
উল্লিখিত ডিড অব সেটেলমেন্ট সম্পাদনের পর লতিফুর রহমান রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (আরজেএসসি) কর্তৃক প্রণীত শেয়ার হস্তান্তর-সংক্রান্ত ফরম-১১৭ স্বাক্ষর করেন। এর মাধ্যমে তিনি তাঁর নিজের মালিকানাধীন কোম্পানি ট্রান্সকম লিমিটেডের ২৩ হাজার ৬০০ শেয়ারের মধ্যে ১৪ হাজার ১৬০ শেয়ার বড় মেয়ে সিমিন রহমান, ৪ হাজার ৭২০ শেয়ার ছোট মেয়ে শাযরেহ্ হক ও ৪ হাজার ৭২০ শেয়ার ছেলে আরশাদ ওয়ালিউর রহমান বরাবর হস্তান্তর করেন। পরবর্তীতে এই ফরম-১১৭ সমূহ আরজেএসসিতে জমা দেওয়া হয়। আরজেএসসি কর্তৃক যথারীতি শেয়ার হালনাগাদপূর্বক শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ারসংখ্যা সংবলিত শিডিউল-এক্স ইস্যু করা হয়।
লতিফুর রহমান ২০২০ সালের ১ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর কোম্পানি খুব সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়ে আসছিল। লতিফুর রহমানের দুই মেয়ে সিমিন রহমান ও শাযরেহ্ হক এবং ছেলে আরশাদ ওয়ালিউর রহমান পরবর্তীতে ২০২১-২০২২ ও ২০২২-২০২৩ করবর্ষে তাঁদের ব্যক্তিগত ইনকাম ট্যাক্স রিটার্নে ২৩ হাজার ৬০০ শেয়ার থেকে তাঁদের বরাবর হস্তান্তরিত শেয়ার প্রদর্শন করেন।
তৎকালীন ফ্যাসিবাদী সরকার এবং সেই সরকারের দোসর এস আলমের বিভিন্ন দেশবিরোধী কার্যকলাপ ট্রান্সকম গ্রুপের মালিকানাধীন দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। যে কারণে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ট্রান্সকম গ্রুপকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় তারা।
কোনো ধরনের মিথ্যা, মানহানিকর, অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছে ট্রান্সকম গ্রুপ। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব গণমাধ্যমকে যথাযথভাবে যাচাইবাছাই ছাড়া মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানাচ্ছে ট্রান্সকম গ্রুপ।